আল-কুরআন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। এটি জ্ঞান বিজ্ঞানের মূল উৎস। নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও এ কিতাব বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কুরআন মজিদ হলো নৈতিকতার আধার। নীতি- নৈতিকতার সকল দিকই এ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে নানাভাবে নৈতিকতার শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। এ পাঠে আমরা নৈতিক শিক্ষা প্রদানে আল-কুরআনের নানা দিকের কথা জানব।
আল-কুরআন আল্লাহ তায়ালার বাণী। এতে আল্লাহ তায়ালার পরিচয়ও বর্ণনা রয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার নানা গুণের পরিচয় পাই। যেমন- তিনি করুণাময়, অসীম দয়ালু, ক্ষমাশীল, ন্যায়পরায়ণ । মহান আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হওয়া আমাদের কর্তব্য।
আল-কুরআন থেকে আমরা এসব গুণের পরিচয় লাভ করব। এরপর আমরা এগুলোর চর্চা করব। ফলে নীতি-নৈতিকতার দ্বারা আমরা আমাদের চরিত্র সুন্দর করতে পারব।
দুনিয়াতে আগমনকারী নবি-রাসুলগণের বর্ণনা রয়েছে আল-কুরআনে। এতে তাঁদের পরিচয়, তাঁদের স্বভাব-চরিত্র ইত্যাদির বিবরণ দেওয়া হয়েছে। নবি-রাসুলগণের সফলতা, কৃতিত্বের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ছিলেন নিষ্পাপ। নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি তাঁদের চরিত্রের ভূষণ ছিল । তাঁরা ছিলেন মানবজাতির জন্য আদর্শ। আর যারা তাঁদের অনুসরণ করেছে তারাই সফলতা লাভ করেছে। আর আল-কুরআনের শিক্ষার দ্বারাই আমরা তাঁদের অনুসরণ করতে পারি।
আমাদের প্রিয়নবি (স.) ছিলেন নবি-রাসুলগণের সর্দার। তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী । সকল গুণের পরিপূর্ণ সমন্বয় তাঁর চরিত্রে ঘটেছিল । আল-কুরআনে বলা হয়েছে-
অর্থ : “নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (স.)-এর চরিত্রে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আল-আহযাব : ২১)
মহানবি (স.)-এর চরিত্র ও নৈতিকতার কথা কুরআন মজিদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। একবার উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন-
অর্থ : “আল-কুরআনই তো তাঁর (রাসুলের) চরিত্র।”
অর্থাৎ আল-কুরআনের সমস্ত শিক্ষা ও নৈতিকতাই তাঁর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ছিল। এসব শিক্ষা অনুশীলন করে আমরাও প্রিয়নবি (স.) এর উত্তম চরিত্র ও নৈতিকতার অনুকরণ করতে পারি।
কুরআন মজিদে পূর্ববর্তী বহু জাতি ও মানুষের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যারা তাদের পাপ ও অনৈতিক কাজের জন্য ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল তাদের সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যেমন- আদ জাতি, ছামুদ জাতি, ফিরআউন, নমরুদ, কারুন ইত্যাদি। এসব জাতি ও ব্যক্তিদের বর্ণনা আমাদের অনৈতিকতা থেকে বেঁচে থাকার শিক্ষা দেয়। অতএব, তারা যেসব অনৈতিক কাজ করত তা থেকে আমরা বিরত থাকব। আর সর্বাবস্থায় নৈতিকতার অনুশীলন করব।
নৈতিক জীবনযাপনের জন্য অনেক নির্দেশনা আল-কুরআনে দেওয়া হয়েছে। এগুলো আমাদের নৈতিক জীবনযাপনে উৎসাহিত করে। নিচে নীতিমূলক কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো:
অর্থ : “সে-ই সফলকাম হবে যে নিজেকে পবিত্র করবে। আর যে নিজেকে কলুষিত করবে সেই ব্যর্থ হবে ।” (সূরা আশ্-শামস, আয়াত ৯-১০)
অর্থ : “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন ।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৫৩)
অর্থ : “নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা ও সদাচারের নির্দেশ প্রদান করেন।” (সূরা আন-নাহল, আয়াত ৯০)
অর্থ : “আর ক্ষমা করে দেওয়াই তাকওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী ।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৩৭)
অর্থ : “আর তোমরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে, নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে (কিয়ামতে) জিজ্ঞাসা করা হবে ।” (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৩৪)
এভাবে আল-কুরআনের বহু আয়াতে নৈতিক গুণাবলি অনুশীলনের জন্য আদেশ ও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে । পাশাপাশি অনৈতিক ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার শিক্ষাও দেওয়া হয়েছে। আমরা অনৈতিকতা থেকে বিরত থাকার জন্য নিষেধমূলক কয়েকটি আয়াত নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
অর্থ : “তোমরা খাও ও পান কর । তবে অপচয় করো না । নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ তায়ালা) অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।” (সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত ৩১)
অর্থ :“ অহংকারবশত তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না । নিশ্চয় আল্লাহ কোনো উদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা লুকমান, আয়াত ১৮)
অর্থ : “আর তোমরা একে অপরের পেছনে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই কর ।” (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত ১২)
এছাড়া আরও অনেক আয়াতের দ্বারা মানবজাতিকে নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে । আমরা এসব শিক্ষা জানব এবং নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করব । ফলে আমাদের চরিত্র সুন্দর হবে । আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করব।
কাজ : খ. শিক্ষার্থীরা নীতিমূলক আয়াত পাঁচটি কাগজে লিখে নিজ নিজ পড়ার টেবিলের সামনে ঝুলিয়ে রাখবে। |
আরও দেখুন...